অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা রাজধানী ঢাকার মতিঝিল। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগের প্রধান শাখা এই এলাকাতেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে লাখো মানুষের আনাগোনা। রাত নামলেই কমতে শুরু করে জনসমাগম। কিন্তু দিনের এই মতিঝিলেই ভিন্ন এক রাতের অন্ধকার জগৎ। যেখানে রাত যত গভীর হয় বাড়ে মানুষের ভীড়। তাও আবার যেনতেন মানুষ নয়, ভিআইপি, সিআইপি সব ধনীদের সমারোহ। উদ্দেশ্য জুয়া! বিদেশী ভাষায় যাকে বলে ‘ক্যাসিনো’।
মতিঝিলের ফকিরাপুলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এমনই এক ক্যাসিনোতে হানা দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। আজ বুধবার বিকেল থেকে অভিযান চলা ওই অবৈধ ক্যাসিনোর নাম ‘ইয়ংম্যানস ক্লাব’। তিন ঘন্টার ওই অভিযান শেষে রাত ৮টার দিকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সরোয়ার আলম।
অভিযান চলাকালে সরেজমিনে ক্যাসিনোতে গিয়ে দেখা যায় চোখ ধাধানো সব এলাহী কারবার। একটি দুইতলা ভবনের নিচতলার পুরোটা জুড়ে জুয়ার আয়োজন। রয়েছে বিদেশী পদ্ধতিতে জুয়া খেলার ১০টি বোর্ড, ইলেক্ট্রনিক মনিটর, জুয়ার গুটি, টাচ; মোট কথা হলিউডের সিনেমাতে যে ধরণের জুয়ার আসরগুলো দেখা যায়, তার সবই ঢাকার এই অবৈধ ক্যাসিনোতে বিদ্যমান। ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, এর চারপাশ, সড়কের পাশে মূল গেইট এবং ভেতর মিলিয়ে প্রায় ২০টির বেশি সিসি ক্যামেরা বসানো। ভেতরে আছে নানা রংয়ের বিদেশী লাইট। আলো-ছায়ার অন্দর মহলে একেক পাশে একের ধরনের জুয়া খেলার আয়োজন। এক কোণায় মদের বার। রয়েছে সারি সারি সাজানো বিদেশী মদের বোতল। অভিযানকালে দেখা গেলো পশ্চিমা পোশাকধারী দুই নারীকে। তারা পুরুষ জুয়াড়িদের সঙ্গ দেওয়ার জন্য নিয়োজিত ছিলেন।
র্যাব কর্মকর্তাদের অভিযানিক ব্যস্ততার
ফাঁকে কথা হয় কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে। তারা জানালেন, রাত বাড়লে ক্যাসিনো জমতে
শুরু করে। ভিন্ন এক পরিবেশ তৈরী হয় সেখানে। অন্ধাকারাচ্ছন্ন ভবনের নিচতলা
জুড়ে লোকের সমারোহ ঘটে। চলে মিউজিক, বাড়ে নারীর সংখ্যাও। রাতভর চলে জুয়া।
সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে খেলা শুরু। কেউ কেউ ৫০ হাজার, এক লাখ এমনকি ৫ লাখ
টাকার জুয়াও ধরেন এক রাতে। রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন অফিসের বড় কর্মকর্তা,
বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরাই আসেন ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের
অনেক কর্তারাও যান সেখানে। পুরুষদের পাশাপাশি ধনাঢ্য নারীরাও জুয়া খেলায়
মত্ত থাকেন। জুয়া খেলেন, হারেন বা জেতেন, ফাঁকে ফাঁকে করেন মদ্যপান। মদ
ছাড়া অন্যান্য নেশা গ্রহণের আসরও বসে। এভাবেই হয় রাত পার। ভোর রাত পর্যন্ত
থাকে এই রঙিন দুনিয়ার আবহ। ভোরের আলো ফুটলে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।
কর্মীরা জানিয়েছে, অভ্যন্তরে অবৈধ ক্যাসিনো চললেও এটিকে সবাই ফুটবলের ক্লাব হিসেবে জানতো সবাই। আনুমানিক ৬ মাস ধরে ক্যাসিনো পদ্ধতি চালু হয়েছে সেখানে। এর আগে প্রত্যেক রাতে নানা রকম জুয়া খেলা হতো। সেখানে প্রতি রাতে অর্ধকোটি থেকে কোটি টাকার খেলা চলতো।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী
ম্যাজিষ্ট্রেট সরোয়ার আলম বলেন, ওই ক্যাসিনো থেকে সর্বমোট ১৪২ জনকে
গ্রেফতারের পর তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। ৩১জনকে এক বছর করে
কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এরা ক্যাসিনোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী। বাকী ১১১জনকে
৬ মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযান চলাকালে একজন বিদেশী নাগরিকও আটক।
তবে সেখানে আটক করা দুই নারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আইনে এ ধরনের জুয়ার আসরের কোনো অনুমোদন নেই। এর মালিক যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদকে আটক করা হয়েছে।