হত্যা চেষ্টা মামলার আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বর থেকে কল করে মামলার বাদি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের মুলাদী উপজেলায়।
এই ঘটনায় হুমকির শিকার ওই উপজেলার ২ নম্বর নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হাসানাত জাপান বাদী হয়ে সোমবার (১৮ মে) মুলাদী থানায় সাধারণ ডায়েরীটি দায়ের করেন। যার নম্বর-৭২৫। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুলাদী থানার ওসি।
তবে ডায়েরীতে কারোর নাম উল্লেখ করা না হলেও সেখানে একটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। যে নম্বরটি মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান মিঠু খাঁ’র নম্বর বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে আসামি গ্রেফতার করাকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যানকে হুমকি এবং অকথ্য ভাষায় গালি দেয়ার একটি অডিও রেকর্ড এক মোবাইল থেকে অন্য মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই অডিও রেকর্ডটি মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যানের বলেও দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসানাত জাপান।
তবে সাধারণ ডায়েরীতে থাকা অভিযুক্ত নম্বরটি তার নন বলে দাবি করেছেন মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু খাঁ। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগও অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা।
সাধারণ ডায়েরীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘গত ৭ মে উপজেলায় জেলেদের চাল বিতরণ করছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসানাত জাপান। এসময় ট্যাগ অফিসার ও জেলা মৎস্য অফিসের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
তাদের উপস্থিতিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা তথাকথিত সর্বহারা বাদল খাঁর নেতৃত্বে দা, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে জেলেদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ইউপি চেয়ারম্যান জাপানকে প্রাণনাশের চেষ্টা ও কর্মীদের মারধর করে মালামাল লুটের পায়তারা করে।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অভিযোগের সত্যতা পান। পরে জেলা প্রশাসকের পরামর্শে থানায় মামলা দায়ের করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসানাত জাপান। ১৪ মে রুজু হওয়া ওই মামলার সূত্রধরে ১৭ মে এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি দিপু তালুকদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ডায়েরীতে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘ওই আসামিকে গ্রেফতার করায় তার পক্ষ হয়ে একই দিন রাত ৯টা ৭ মিনিটে ০১৭১১১৮৬১১২ নম্বর দিয়ে কল করে মামলার বাদি ইউপি চেয়ারম্যানকে জীবন নাশের হুমকি এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়। তখন ইউপি চেয়ারম্যান সংযোগ কেটে দিলে পরে অপর একটি নম্বর দিয়ে ফোন করে ইউপি চেয়ারম্যানকে হতাহতের হুমকি দেয়া। পুরো ঘটনার ফোন রেকর্ড সংরক্ষিত আছে বলেও সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মুলাদী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে সাধারণ ডায়েরীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সন্ধ্যায় এ ধারণের একটি জিডি হয়েছে। তবে ওই জিডিতে কারোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র একটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এদিকে সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখিত অভিযুক্তর মোবাইল নম্বরে ফোন করে পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি নিজের নাম পরিচয় বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। সেই সাথে কে এবং কি কারণে জিডি করেছে সে বিষয়টি জানতে চান। এক পর্যায় বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে পুনরায় তাকে ফোন করা হলেও তা রিসিভি করেননি।
পরে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে জানাগেছে সাধারণ ডায়রীতে উল্লেখিত মোবাইল নম্বরটি মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু খাঁ’র।