ফক্সকন এর সূত্র মতে, গাজীপুরের পোশাক কারখানাগুলোতে রোবট ব্যবহার শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০৪০ সালে দু-একটি কারখানায় শ্রমিকের পরিবর্তে স্বল্প পরিসরে রোবটকে কাজে লাগানো হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এর ব্যবহার পরিধি বাড়ানো হবে। প্রতিষ্ঠানটির স্বয়ংক্রিয় কমিটির মহাব্যবস্থাপক দাই জিয়া পেং জানান, বর্তমানে চীনের কুনশানে প্রায় ৬০০ কারখানা মানুষের পরিবর্তে রোবট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে।
জানা গেছে, চীনের মতো বাংলাদেশের কারখানাগুলোতেও তিন পদ্ধতিতে রোবটের ব্যবহার করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ বা বার বার করতে হয় এমন কাজে নিয়োজিত কর্মী বা শ্রমিকদের রোবট দ্বারা স্থানান্তরিত করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাড়তি রোবট দিয়ে উৎপাদন দক্ষতা বাড়ানো হবে। সর্বশেষ পর্যায়ে পুরো কারখানাই সয়ংক্রিয় করা হবে। শুধু উৎপাদন সরবরাহ, পরীক্ষা ও পরিদর্শনের প্রক্রিয়ায় অল্প কিছু কর্মী রেখে পুরো কারখানা স্বয়ংক্রিয় করা হবে।
বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন-শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ফেডারেশন সূত্র বলছে, বাংলাদেশে বেকারত্ব বাড়ানোসহ সারা বিশ্বেরই বেকার সমস্যা সৃষ্টির জন্যই চীন এমন অশুভ প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে ব্যস্ত। এমনিতে দেশে বেকার সমস্যা, এর মধ্যে রোবট এই সেক্টর দখলে নিলে দেশের ২০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবার শঙ্কা রয়েছে। এতে করে ৪০ লাখ পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়বে।
প্রস্তাবিত বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন গাজীপুর আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলী বাবুল জানান, দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে- ২৬ লাখ ৬০ হাজার জন লোক বেকার। এর মধ্যে কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিকও রয়েছে। গত কয়েক বছরে চায়নার সুয়েটার কারখানায় কস্সের পরিবর্তে জ্যাকার্ড ঢুকিয়ে হাজার-হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। এরপর রোবট ঢুকলে লাখ-লাখ লোক বেকার হয়ে যাবে। কারখানা মালিকরাই শুধু লাভবান হবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান পলমল গ্রুপের কর্টজ ২ এর গাজীপুর কারখানার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, যে কোনো ডিজিটাল প্রযুক্তিকে আগামী বিশ্বের জন্য স্বাগত জানাই। তবে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করলে শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে সেটা সমর্থন যোগ্য নয়। তিনি বলেন, শ্রমিকদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। নিশ্চয় সরকার অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি ড. রুবানা হক জানান, ডিজিটাল বিশ্বে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার এটা স্বাভাবিক বিষয়। অদূর ভবিষ্যতে পোশাক কারখানায় রোবট ব্যবহার হলেও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করেই তা ব্যবহার হবে।