জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর ও একজন নারীর একটি ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ভিডিওটিতে যে পুরুষকে দেখা যায়, তিনি সেই লোক নয়। এদিকে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সর্বমহলে বেশ তোলপাড় ও ধিক্কারের ঝড় উঠেছে।
বিডি২৪লাইভ থেকে যোগাযোগ করা হয় জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারীরা গত ১২দিন ধরে আমার কাছে প্রথমে ৫০০ ডলার এরপর বাংলা টাকা ১ লাখ দাবি করে। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করি। এরপর গত কাল এমন ভিডিও প্রকাশ হয়।
যে ভিডিওটি প্রকাশ হয়েছে সেটা কি জেলা প্রশাসকের আওতাধীন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এটা আমাদের আওতাধীন না। সেখানে কি করে সিসি ক্যামেরা আসলো আমি বলতে পারবো না। আমার অফিসের কেউ ষড়যন্ত্র করেছে আমার বিরুদ্ধে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাচ্ছি।
এই ঘটনার পর অফিস সরকারী নারীর সাথে কি আপনার যোগাযোগ হয়েছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার সাথে ওনার পরিবার ও ওনার কথা হয়েছে। তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনিও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চায়।
জেলা প্রশাসকের বাহিরে আপনি একটি পরিবারের অবিভাবক। এই ঘটনার পর আপনার পরিবারে কি কোন ধরণের আঘাত পড়েছে?
না, আমার পরিবারে কোন ধরণের আঘাত পড়েনি। আমার পরিবারকে বুঝিয়েছি বিষয়টি।
প্রশাসনিক ভাবে কি আপনার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছ? এই ঘটনার কি তদন্ত হবে?
আমার সাথে বিভিন্ন উপর মহল থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। জানতে চেয়েছেন। আমি সঠিকটি বলেছি। এরপর কোন ধরণের তদন্ত হবে কিনা আমি বলতে পারছি না।
জামালপুরের জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার বিডি২৪লাইভকে বলেন, এই ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে আমারা যারা চাকরিতে কর্মরত রয়েছি তাদের কাছে ফোন আসছে, জানতে চাওয়া হচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য লজ্জাকর। আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়েছি। এমন ঘটনা আমাদের জন্য কাম্য ছিল না।
জামালপুরের জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ কবির উদ্দীনের কাছে এ বিষয়ে বিডি২৪লাইভ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোররাত থেকে রহস্যজনক কারণে ওই আইডির ওয়াল থেকে ভিডিও লিঙ্কটি সরিয়ে নেওয়ায় সন্দেহ আরো দানা বেঁধে উঠেছে। নিজ অফিস কক্ষে একজন নারীর সাথে জেলা প্রশাসকের অবৈধ মেলামেশার এই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তিদেরও এ নিয়ে বেশ তৎপর থাকতে দেখা যাচ্ছে।
৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে যে কক্ষটি দেখা যায়, সেটি জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অফিস কক্ষে তার চেয়ারের ঠিক ডান পাশের ছোট একটি কক্ষ। ছোট এই কক্ষে একটি ছোট খাট বসানো হয়েছে। ভিডিওটিতে যে পুরুষকে দেখা যায়, তিনি জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বলে দাবি করা হচ্ছে। আর যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি এই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেই সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া একই অফিসের একজন এমএলএসএস বা পিয়ন।
জানা গেছে, জেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ পদধারী এই সরকারি কর্মকর্তা তার অফিসেই একজন নারীর সাথে অবৈধ মেলামেশার এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘খন্দকার সোহেল আহমেদ’ নামের একটি পেজ থেকে আপলোড হয় গত ১৫ আগস্ট বিকেলের দিকে। ফেসবুক আইডি থেকে এটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ব্যাপকহারে নজরে আসতে থাকে ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারীদের কাছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল তোলপাড় এবং ধিক্কারের ঝড় ওঠে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জামালপুরে যোগদান করেছেন ২০১৭ সালের ২৭ মে। যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তিনি তার অফিসের কক্ষের পাশে ছোট্ট একটি কক্ষে ধূমপান ও ব্যক্তিগত সরকারি গোপনীয় বৈঠকের জন্য কক্ষটি ব্যবহার করে আসছেন। সম্প্রতি ওই কক্ষে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি খাট বসানো হয়েছে। তাতে বিশ্রাম নেওয়ার মতো বালিশ, চাদর সবকিছুই আছে। সম্প্রতি ওই কক্ষে একাধিক নারীর যাতায়াতকে কেন্দ্র করে গোটা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেখানে একজন নারীর সাথে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অবৈধ মেলামেশার ভিডিওটি ফেসবুকে, ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে মেসেঞ্জারে, মোবাইল থেকে মোবাইলে এবং ইমেইেলে ছড়িয়ে পড়ায় আগে শোনা সেই গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নিয়েছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।