শিমলাকে |
চট্টগ্রাম: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্লেন ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত মাহাবি জাহান ওরফে পলাশ আহমেদ ট্রানজিটের অজুহাতে মুম্বাইতে শিমলার কাছে ছিলেন। এ সময় পলাশ শিমলাকে বলেছিলেন, মুম্বাই ঘুরে ফ্লাইট লন্ডন যাচ্ছে, ট্রানজিটের ফাঁকে তিনি সিমলাকে দেখতে এসেছেন।
দুই তিন দিন পলাশ সেখানে অবস্থান করলে সিমলা পলাশকে জানান, ট্রানজিটের সময় এক-দুই ঘণ্টা হতে পারে, এত দীর্ঘ তো হয় না। তখন পলাশ বিভিন্ন অসংলগ্ন কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৩ ঘণ্টা। এ সময় অনেক অজানা তথ্য উঠে আসে। সিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।
পুলিশ সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সিমলা জানিয়েছেন ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় দু’জনের। পরিচয়ে পলাশ নিজেকে প্রযোজক বলে পরিচয় দেন। পলাশ বলেন, ঢাকার উত্তরা ও নারায়ণগঞ্জে তার বাড়ি থাকলেও বেশিরভাগ সময় ব্রিটেনে থাকেন তিনি।
পরিচয়ের সময় একে অপরের ফোন নম্বর নেন। পরে মোবাইলে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। এতে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
২০১৮ সালের ৬ মার্চ দু’জন বিয়ে করেন। পরে বাসায় থাকতে চাইলে পলাশ সিমলাকে উত্তরায় নিজের বাড়িতে ভাড়াটিয়ারা থাকছেন, নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি বলে অজুহাত দেখান।
এরপরও বিভিন্ন সময় কথা বলতে বলতেই সিমলা বুঝতে পারেন পলাশ একজন শঠ, প্রতারক। তার ‘মানসিক সমস্যা’ রয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ২০১৮ সালের ০৫ নভেম্বর বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠান তাকে।
বিচ্ছেদের নোটিশ পেয়ে পলাশ বহুবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানান সিমলা। বলেন, বারবার চেষ্টা করলেও পলাশের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিমলা। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা কেবল পলাশের সঙ্গে বিয়ে ও বিচ্ছেদের কথা জানতে চেয়েছেন। এর সবকিছুই তিনি জানিয়েছেন।
রাজেশ বড়ুয়া জানান, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পলাশের বিষয়ে জানতে সিমলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। কিন্তু মুম্বাইয়ে অবস্থান করায় তিনি তখন সময় দিতে পারেননি। দেশে ফিরে নিজ থেকেই সিমলা ফোন করার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করা হবে।তদন্তের প্রয়োজনে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার পথে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজে যাত্রীদের জিম্মি করে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন পলাশ আহমেদ। ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ।
এরপর পলাশসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা।