আলীমুজ্জামান হারুন :দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে অচীরেই নয়া বিপ্লব আসছে। বিটিসিএল বেশ কয়েকটি নয়া প্রকল্পের হাতে নিয়েছে । যার কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে । যার মধ্যে অন্যতম ২ হাজার ৫শ ৭৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প যার নাম “মর্ডানাইজেশন অফ টেলিকমিউনেকেশন নেটওয়ার্ক” (এমওটিএন) । এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে টেলিযোগাযোগ খাতে সেবা প্রদান, সেবার নির্ভরযোগ্যতা, নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা এবং ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ সব ক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
বহুজাতিক চীনা টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি জেডটিই কর্পোরেশন এই প্রকল্পের কাজ করছে। পুরাতন এক্মচেঞ্জগুলো পরিবর্তন করে অত্যাধুনিক করা হচ্ছে । এতে থাকবে নানা সুবিধা ।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মাঠ পর্যায়ে কারিগরি জনবলকে পিডিএ (পারসোন্যাল ডিজিট্যাল এসিস্ট্যান্স) ডিভাইস প্রদান করা হবে। এ কার্যক্রমে কোনো গ্রাহকের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পিডিএ ডিভাইসে চলে আসবে। সংযোগ নিশ্চিত করার পর তথ্য পিডিএ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেন্দ্রীয় সিস্টেমে স্থানান্তরিত হবে। অর্থাৎ একটি নতুন সংযোগের পুরো প্রক্রিয়া হবে পেপারলেস বা কাগজবিহীন। এতে নতুন সংযোগ প্রদানে বর্তমানে গ্রাহকরা যে ধরনের বিড়ম্বনা ভোগ করেন সে ধরনের বিড়ম্বনা আর থাকবে না বলে প্রকল্প পরিচালক মো: আসাদুজ্জামান চৌধুরী আশাবাদবাক্ত করেন।
এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিটিসিএলের সৎ, মেধাবী কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত জিএম আসাদুজ্জামান দক্ষতার সাথে এই কাজের তদারকি করছেন । তিনি বিটিসিএলের শুরু থেকে কোস্পানী সচিবেরও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ।
বিটিসিএল সূএ জানায়, ১৬ লাখ গ্রাহক ধারণক্ষমতার আইএমএস কোর এক্সচেঞ্জকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ঢাকায় ৭ লাখ, চট্টগ্রামে ৫ লাখ এবং খুলনায় চার লাখ গ্রাহক এর সুবধিা পাবনে। এসব কোর এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সারাদেশে গ্রাহক ব্যবস্থাপনা করা হবে। ভৌগোলিকভাবে তিনটি স্থান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হওয়ায় যেকোনো পরিস্থিতিতে গ্রাহক সেবা অব্যাহত রাখা যাবে। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে গ্রাহক ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাবে দেশের সর্বত্র উন্নত মানের সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রস্তাবিত আইএমএস কোরের মাধ্যমে এ সীমাবদ্ধতা সহজে দূর করা সম্ভব হবে। তাই সারাদেশে পুরনো ডিজিটাল এক্সচেঞ্জগুলোর স্থলে ৫৬০টি এজিডবিøউ এক্সচেঞ্জ প্রতিস্থাপন করা হবে। এজিডবিøউ এক্সচেঞ্জের মোট ক্ষমতা হবে ৪,৩১,১২০।
বিটিসিএলের সাম্প্রতিক প্রকল্পে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অপটিক্যাল ফাইবারভিত্তিক গ্রাহক সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে আইসিটি যুগে এরূপ চাহিদা ব্যাপক। এমওটিএন প্রকল্প দেশের বড় শহরগুলোতে (মূলত বৃহত্তর জেলা শহর) অপটিক্যাল ফাইবারভিত্তিক গ্রাহক ও অফিস সংযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ব্যবস্থা ব্রডব্যান্ড চাহিদা পূরণ করবে। গ্রাহক পর্যায়ে দুই লাখ ৮০ হাজার সংযোগ (এফটিটিএইচ জিপিওএন) এবং অফিস পর্যায়ে পাঁচ হাজার সংযোগরে (এফটিটিও) ব্যবস্থা রয়েছে।স
বিটিসিএলের বিদ্যমান ট্রান্সমিশন লিঙ্কের সমন্বয় করে নতুন স্থাপিত লিঙ্ক মিলিয়ে সারাদেশে উচ্চ ক্ষমতার (ডিডবিøউডিএম) ৮টি রিং তৈরি করা হবে। এতে দেশব্যাপী ট্রান্সমিশনের মেরুদন্ড হবে সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য। যেকোনো দুর্যোগে লিঙ্কের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ট্রান্সমিশন সেবা ব্যাহত হবে না। সারাদেশে যাবতীয় টেলিফোন সেবা নিরবচ্ছিন্ন থাকবে। একই কারণে ঢাকায় তিনটি মেট্রো রিং এবং চট্টগ্রামে একটি মট্রেো রিং তৈরি করা হবে। মোট ১,২৪০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তিন জোড়া (এক+এক রিডানডেন্সি) কোর রাউটার স্থাপন করার মধ্য দিয়ে সারাদেশে আইপি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। এর ফলে দেশের সব অংশ থেকে চাহিদা মোতাবেক ইন্টারনেট ও আইসিটিভিত্তিক ব্রডব্যান্ড সেবা পাওয়া যাবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) থাকায়, কক্সবাজার কুয়াকাটার মাধ্যমে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ এবং বেনাপোল হয়ে ভারতের মাধ্যমে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ স্থাপিত হবে। তিনটি স্বতন্ত্র ভৌগোলিক সংযোগ থাকায় যেকোনো দুর্যোগে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ও ডাটা সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন থাকবে। ইন্টারনেট সংযোগে নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি ও অপরিহার্য।
যাবতীয় গ্রাহকসেবাকে অটোমেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০ লাখ গ্রাহক ক্ষমতার বস (বিজনেস অপারেশন এন্ড সাপোর্ট সিস্টেম) স্থাপন করা হবে। বিজনেস সাপোর্ট সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত হলো: গ্রাহক ব্যবস্থাপনা, পণ্য ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক সেবা, ওয়েব সেলফ-কেয়ার, বিলিং এন্ড রেটিং, জব্দ ব্যবস্থাপনা ইনভয়েসিং। অপারেশন সাপোর্র্ট সিস্টেমে (ওএসএস) রয়েছে ত্রুটি ব্যবস্থাপনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, গোলযোগ ব্যবস্থাপনা, জনশক্তি ব্যবস্থাপনা এবং শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা।
বিজনেস সাপোর্ট সিস্টেমের আওতায় গ্রাহকদের আবেদন প্রক্রিয়া, আবেদনপরবর্তী প্রক্রিয়াকরণ, অভিযোগ দায়ের, অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ, নেটওয়ার্কের ক্রটি দূরীকরণ, বিল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি যাবতীয় কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আসবে। এতে কমপক্ষে ২০ লাখ গ্রাহক উপকৃত হবে।
বস সিস্টেমে নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার (এনওসি) বা ২০টি অপারেটরস চেয়ার ৯টি বড় এলসিডি পর্দাসম্বলিত একটি বড় এনওসি থাকবে যেখান থেকে সার্বক্ষণিক সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক মনিটর ও প্রয়োজনীয় নিদের্শনা প্রদান করা যাবে।
সারাদেশে বিটিসিএলের বিদ্যমান অপটিক্যাল ফাইবার এবং এমওটিএন প্রকল্পের আওতায় স্থাপিতব্য অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ককে একীভূত করে একটি সমন্বিত কম্পিউটারাইজড মডেল তৈরি করা হবে। এ ব্যবস্থার আওতায় সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্ট্যাটাস রিপোর্র্ট কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করা যাবে। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, যেকোনো প্রান্তে সেবার সম্ভাব্যতা যাচাই, ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি কাজে ই-ডিজাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এমওটিএন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সারাদেশব্যাপী বিটিসিএলের একটি সুবিন্যস্ত, সমন্বিত ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হবে আশা করা যায়, এবং আধুনিক পদ্ধতিতে গ্রাহকবান্ধব সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এটা হবে বাংলাদশেরে টলেযিোগাযোগ খাতে বিপ্লব সাধতি হবে এবং বিটিসিএলকে এক অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করবে।
কেবল মাত্র জেডটিই এই প্রকল্পই বাস্তবায়ন করছেনা তারা ২০ বছর এরও অধিক সময় ধরে বাংলাদেশে কাজ করছে। তারা টিআর-ফোরমানের একটি ডেটা সেন্টারের নির্মাণ করছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধুহাই-টেকসিটিতে। যার কাজ শেষ এর পথে। এই ডাটা সেন্টার এর ধারন ক্ষমতা ২ পেটাবাইট। ১ পেটাবাইট সমান ১০ লাখ গিগাবাইট। এই ডেটা সেন্টারে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। গ্রাহকদের জন্য সবুজ, উদ্ভাবনী এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা সেন্টার নির্মাণের জন্য জেডটিই বিখ্যাত।
বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশ সরকারি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে, যেমন ট্যাক্স ফাইলিং, ই-ক্রয়, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন, সামাজিকসেবা, ই-পেমেন্টএবংভর্তি। এইডেটাসেন্টার ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য মূল ভিত্তি। যেটা ছাড়া ডাটা সংরক্ষণ, তথ্যব্যবহার এবং প্রক্রিয়া সমপন্ন করতে পারবেন না।
এই প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ আরও উন্নত, যেমনই-শিক্ষা, ই-পর্যটন, ই স্বাস্থ্য এবং স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট এর কাজে এগিয়ে যাবে। এটি নির্ভর যোগ্যতা এবং কর্মক্ষমতার দিক দিয়ে সর্বোচ্চ স্তরের সেবা প্রদান করবে। এটি সমগ্র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের এক নম্বর সুরক্ষিত ডাটা সেন্টার এবং বিশ্বের আট নম্বর সবচেয়ে নিরাপদ ডাটা সেন্টার। এই ডাটা সেন্টার এর আপ টাইম ইনস্টিটিউট থেকে আপটাইম সার্টিফিকেশন আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এর হৃদয় হচ্ছে এই ডাটাসেন্টার। এই সম্পূর্ণ প্রকল্পের সর্বোপরি পরিদর্শক জেডটিই। তারা আইসিটি এবং বিদ্যুৎ সম্পর্কিত প্রকল্প বাস্তবায়নেও কাজ করছে। জেডটিই বাংলাদেশে আইসিটি প্রবৃদ্ধিতে অনেক অবদান রাখার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশে আরও আইসিটি উন্নয়নের জন্য ভবিষ্যতেও জেডটিই আরও ভাল কাজ করবে বলে আশাবাদ বাক্ত করা হয়।
জেডটিইই গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে আইসিটি পণ্য এবং সমাধানগুলির জন্য নিবেদিত। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাংলাদেশ আইসিটি খাতে ব্যাপক এগিয়ে গেছে। “ বাংলাদেশ এশিয়ার সর্বোচ্চ আইসিটি উন্নতি বৃদ্ধির হারের মধ্যেএকটি”, আইসিটি বিভাগের সাবেক সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন। জেডটিই সুইচিং, অ্যাক্সেস, অপটিক্যাল ট্রান্সমিশন, ডেটা, হ্যান্ডসেটস এবং টেলিযোগাযোগ সফট ওয়্যারের বাজারে-নেতৃস্থানীয়, প্রথম-শ্রেণীর প্রযুক্তি গুলি বিকাশ ওউৎপাদন করতে সক্ষম। বিশ্বজুড়ে দেশগুলি তাদের আইসিটি প্রযুক্তির উন্নয়ন করছে যেটাতে শিল্প চেইন গ্লোবাল স্থাপনার হার বাড়বে।