প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারাই কেবল বোঝেন এর কতটা যন্ত্রণা। যারা এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদেরকে দুঃসহ শারিরীক কষ্ট সইতে হয়েছে। এর মধ্যে যদি সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। স্বজনদের দুশ্চিন্তাও বেড়ে যায় বহুগুণ। ইতালিয়ান জায়ান্ট ক্লাব জুভেন্তাসের তারকা ডিফেন্ডার দানিয়েলে রুগানির বান্ধবী অন্তঃসত্তা অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
গত মার্চের শুরুর দিকে ইতালি করোনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায়নি। এর ফল হয়েছে ভয়াবহ। মার্চ মাসে রুগানিই আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার শরীর থেকে ভাইরাস চলে যায় বান্ধবী মিশেলা পেরসিকোর দেহে। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে পেরসিকো বলেন, ‘আমি একে তো গর্ভবতী ছিলাম, তার ওপর করোনা এসে ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি এখন ঠিক আছি, সৌভাগ্যবশত আমার শুধু মৃদু কিছু লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। ঘ্রাণ ও স্বাদ হারিয়ে ফেলেছিলাম, জ্বর ছিল, ক্লান্তি ছিল। অন্য অনেকের তুলনায় দানিয়েলে আর আমি অনেক সৌভাগ্যবান।’
প্রথম যেদিন জানতে পারলেন যে তার বয়ফ্রেন্ড রুগানির করোনা পজেটিভ, সেদিনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে পেরসিকো বলেন, ‘যেদিন শুনলাম দানিয়েলের টেস্টে পজিটিভ এসেছে, আমি ধরেই নিয়েছি আমারও তাই আসবে। এটাতে আমার সন্তানের ওপর কী প্রভাব পড়বে, সেটা ভেবে সে সময় মনে হচ্ছিল আমার মস্তিষ্কে শর্ট সার্কিট হচ্ছে। ভাইরাসটা নতুন, গর্ভাবস্থায় এতে আক্রান্ত হলে কী প্রভাব পড়ে তা তো জানি না। সে কারণে প্রথম কয়েকদিন অনেক ভয়ের ছিল। পরামর্শের জন্য অসংখ্য মানুষকে ফোন করেছি!’
গর্ভে সন্তান থাকায় প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন পেরসিকো। নিজের জন্য যতটা না চিন্তা, তার চেয়ে বেশি চিন্তা ছিল অনাগত সন্তানকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ভয়টা ছিল এই যে, আমার গর্ভে সন্তান আছে। দানিয়েলেও অসুস্থ ছিল, আইসোলেশনে ছিল। যে কারণে আমি একা ছিলাম। তারওপর পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তা তো ছিলই। বেরগামো থেকে আমার বাবা-মা বলতেন তারা সব সময় রাস্তায় শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনই শুনতে পান, আর কিছু না। অথচ তখন মাত্র মার্চের শুরু।’
এই ভয়ানক পরিস্থিতির মাঝে সকলের সহযোগিতা পেয়েছেন পেরসিকো। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করেননি তিনি, ‘ডাক্তারদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর গর্ভের সন্তানকে নিয়ে ভয় কেটে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে সমর্থন পেয়েছি, তাতে মুগ্ধ আমি। সমর্থনটা শুধু জুভেন্টাস সমর্থকরাই করেননি। রুগানিও ভালোবাসাটা অনুভব করেছে। মানুষের এই ভালোবাসা শুধু একটা ফুটবল দলে আটকে ছিল না, ছিল তার চেয়েও বেশি কিছু।’