কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:- কুড়িগ্রাম জেলার, উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়ন এর যাদুপোদ্দার গ্রামে ঘটনার শুরু ৯ মে বিকাল বেলা। করোনার প্রভাবে অতিষ্ট সবাই। তার পরও নিজের মনকে মানাতে না পেরে বাড়ির পেছনে মাঠে খেলতে যায় মিথুন(১৯)। খেলার এক পর্যায়ে বল গিয়ে লাগে মাঠের কোণায় নিয়মিত জুয়া খেলতে বসা এক জুয়ারি দক্ষিণ মধুপুর গ্রামের মৃত সামাদ মেম্বারের বকে যাওয়া পুত্র ফারুখ(৩৮) এর গায়ে। বল হাতে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে খেলতে আসা মিথুনকে। আর হুমকি দেয় ক্রিকেট না খেলার।
গালিগালাজ শুনে খারাপ লাগায় মিথুন উল্টো প্রতিবাদ করে- ” জুয়া খেলতে পারলে ক্রিকেটও খেলা যাবে।” তাদের সামনে দারিয়েই কিছু ছবি উঠায় তাদের খেলার। ছবি তুলতে দেখে মিথুনকে ধাওয়া করে “ফারুখ ও মুকুল(৪৩) মিয়া(মৃত)।” দোষ না থাকা সত্তেও নিজেকে রক্ষার স্বার্থে দৌড়ে বাড়ির দিকে চলে আসে। পরের দিন দুপুরে বাড়ির পাশে এক স্থানে বসে থাকার সময় মুকুল মিয়ার(মৃত) গলা শুনতে পায় মিথুন।
বলতে শোনে-“হাতের কাছে পাইলে ছিড়ি খালুং হয় মাস্টারের বেটাক্।” (হাতের কাছে পেলে ছিড়ে খেয়ে ফেলতাম মাস্টার এর ছেলেকে)। আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এই কথা শুনতে পেয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না মিথুন। পথ আটকিয়ে দেয় মুকুল মিয়ার(মৃত)। ঘটনার কথা পাশেই অবস্থান করা একজন মিথুন এর বড় ভাই মিশনকে জানায়। পরে মিশন(২৬) আসলে তার সাথে হাতাহাতি হয় মুকুল মিয়ার(মৃত)।
ঘটনাস্থলে (যাদুপোদ্দার) মুকুল মিয়ার(মৃত) ভাই আলম মিয়া(৪৮) উপস্থিত হয়। ছাড়াছাড়ি হবার পর মুকুল মিয়ার পুত্র ও ভাতিজারা উপস্থিত হয় ঘটনাস্থলে এবং উচ্চস্বরে বাক-বিতন্ডা চলে। এক পর্যায়ে তারা দৌড়ে নিজ গ্রাম দক্ষিণ মধুপুরে ফিরে যায় এবং লাঠি-সোঁটা নিয়ে ফিরে আসে। এই ঘটনা শুনতে পেয়ে যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে সেই জন্যে পাশেই থাকা আমিনুল ইসলাম(বসা) বুঝানোর জন্য এগিয়ে যায়। কি ঘটছে দেখার জন্য মিশনের চাচী মর্জিনা বেগম(৪৪) তার ২ বছরের নাতনীকে কোলে নিয়ে এগিয়ে যায়। এই ফাকেই মুকুল মিয়ার(মৃত) স্ত্রী বিউটি বেগম(৩৬) ও তার সন্তান ও আরো ২ জন সহ আক্রমণ করে মর্জিনা বেগমের উপর, আঘাত করে মাথায়। দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসে আমিনুল ইসলাম(বসা)(৪৩)। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায় এই ঘটনায়। ছাড়িয়ে দিতে গেলে বাকি সবাই দৌড়ে আসে(মুকুল মিয়ার পক্ষের) আক্রমণ করার জন্য। চিৎকার চেচামেচি শুনে মিশন মিথুন সহ তার পরিবারের অনেকে দৌড়ে আসে।
দৌড়ে আসে মিশনের পিতা সাহাব উদ্দিন মাস্টার(৫৭)। এবং আত্নরক্ষায় লাঠি-সোঁটা হাতে নেয়। তখন ২ পক্ষের সংঘর্ষ হয়। পুলিশকে খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে(যাদুপোদ্দার) উপস্থিত হয় বিকাল ৬ টার দিকে। সেখানে গিয়ে তারা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন এবং মুকুল মিয়ার বাড়ি দক্ষিণ মধুপুরে গিয়ে তাদের পরিবারকে বুঝিয়ে রেখে আসেন যাদুপোদ্দার বাসীর অনুরোধে। পরবর্তীতে খবর পাওয়া যায় আহত হয়েছে মুকুল মিয়া(মৃত)। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত ১১ টা পর্যন্ত খবর পাওয়া যায় মোটামুটি ঠিকই আছে মুকুল মিয়া।
পরবর্তীতে রাত ২ টার পর খবর পাওয়া যায় মৃত্যুবরণ করেছে মুকুল মিয়া। মুকুল মিয়ার মারা যাবার সংবাদ পেয়ে এই ঘটনার সুযোগ নেয় দক্ষিণ মধুপুর ও একই গ্রাম যাদুপোদ্দার এর কিছু স্বার্থলোভী মানুষ। সবাই মিলে আক্রমণ করে এবং লুটপাট করে নিয়ে যায় সাহাব উদ্দিন মাস্টার ও ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আরো ৩ থেকে ৪ টি পরিবার। জীবন বাচানোর জন্য পালিয়ে যায় ঐ পরিবারগুলোর সদস্যরা। পরে জানা যায় ঐ রাতে সাহাব উদ্দিন মাস্টারের পরিবার থেকে ৯৯৯ এ কল দিয়ে সাহায্য চায় তার পরিবারের সুরক্ষার। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে গ্রেপ্তার করে সাহাব উদ্দিন মাস্টার এর স্ত্রী বকুল বেগম(৪৬) ও তার ভাতিজা সান(১৬) এবং আরো দুইজনকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত-ই ছিলেন না বকুল বেগম। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে সেই লুট এর ঘটনা আংশিকভাবে থামালেও তাদের কিঞ্চিত অনুপস্থিতিতে আবারো ঝাপিয়ে পরে সেই স্বার্থলোভী গোষ্ঠী আর বাকি যা আছে সব লুট করে নিয়ে যায়।