ঢাকা: বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে ই-পাসপোর্টের যুগে। বিশ্বের ১১৯তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কোনো দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করলো। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে বারবার এই কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় পিছিয়েছে। অবশেষে বুধবার (২২ জানুয়ারি) কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কারণে নাগরিকরা নানা সুবিধা পাবেন। জেনে নিন ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
ই-পাসপোর্ট কী?
বর্তমানে এমআরপি বা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য থাকবে। যদিও বই হবে একই। এমআরপিতে প্রথমে দুই পাতায় যে তথ্য থাকতো ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমানের তৈরি একটি কার্ড ও অ্যান্টেনা। কার্ডের ভেতরে চিপ। সেখানে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্ট বাহকের সব তথ্য।
ডাটাবেজে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ থাকবে। ফলে ভ্রমণকারীর তথ্য সহজেই জানতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে।
ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অরগানাইজেশন (আইসিএও) এই পিকেডি পরিচালনা করে। ফলে ইন্টারপোলসহ বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য যাচাই করতে পারে। এখানে ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকায় এ ধরনের পাসপোর্ট জাল করা সহজ নয়।
ই-পাসপোর্টের মেয়াদ, বিতরণের সময় ও ফি
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান জানান, ৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছরের জন্য সাধারণ ফি (১৫ দিন) সাড়ে তিন হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) সাড়ে সাত হাজার টাকা। আর ১০ বছরের জন্য সাধারণ (১৫ দিন) ফি পাঁচ হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাত হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) নয় হাজার টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছরের সাধারণ (১৫ দিন) ফি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) সাড়ে ১০ হাজার টাকা। আর ১০ বছরের জন্য সাধারণ (১৫ দিন) সাত হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) নয় হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২দিন) ১২ হাজার টাকা।
সব ফি’র সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
যা লাগবে ই-পাসপোর্ট করতে:
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
কীভাবে পাওয়া যাবে ই-পাসপোর্ট
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। এতে কোনো ছবি এবং কোনো ধরনের কাগজপত্র সত্যায়নের প্রয়োজন নেই। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রসহ বাবা-মায়ের এনআইডির কপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় হাতের ১০ আঙুলের ছাপ, ছবি ও চোখের আইরিশ ফিচার নেওয়া হবে। আবেদন করার বিস্তারিত নিয়মাবলী অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে দেওয়া হয়েছে।
ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা অনলাইনে ভেরিফিকেশন করার প্রচেষ্টা নিয়েছি। সেটা অবশ্যই সফল করবো।
অতি জরুরি ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রি-পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজ উদ্যোগে করে নিয়ে যেতে হবে বলে জানান সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান।
ই-পাসপোর্টেও কি ভিসা নিতে হবে?
প্রচলিত ব্যবস্থার মতো ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসার বিষয়টি একই থাকবে। ভিসা কর্তৃপক্ষ বা দূতাবাসগুলো এই পিকেডি ব্যবহার করে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে নিতে পারবে। এরপরে তারা বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার, সিল দিতে পারবে বা বাতিল করে দিতে পারবে।
এমআরপির কি হবে?
ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি এমআরপিও চালু থাকবে। তবে নতুন করে কাউকে এমআরপি দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে সব এমআরপি তুলে নেওয়া হবে।