প্রায় দেড় মাস তদন্ত শেষে এই অভিযোগপত্র প্রস্তুত করার কথা জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ যে কোনো সময় আমরা এই চার্জশিট আদালতে জমা দেব।”
এই আটজন হলেন- জেকেজি হেলথকেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরী, চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী, আরিফের বোন জেবুন্নেছা রিমা, সাবেক কর্মচারী হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিলা পাটোয়ারী, জেকেজির কোঅর্ডিনেটর আবু সাঈদ চৌধুরী, জেকেজির কর্মচারী বিপুল দাস এবং শফিকুল ইসলাম রোমিও।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ার কিন্তু জুনের শেষ দিকে অভিযোগ আসে, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। নমুনা পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদও তারা দিচ্ছিল।
এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকার কামাল হোসেনের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে তাদের কম্পিউটার থেকে চারজন প্রবাসীরসহ ৪৩ জনের নামে তৈরি করা করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট পাওয়া যায়।
পরদিন কামাল হোসেন বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন ওই দুইজনের বিরুদ্ধে। সরকারি নাম ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ, কাজে অবহেলার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রামণ বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি, করোনাভাইরাসের সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
হুমায়ুন ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরী, তার বোন জেবুন্নেছাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ১২ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
১৩ জুলাই এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ। আরিফুল ও সাবরিনাকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। এর মধ্যে একদিন সাবরিনা ও আরিফুলকে মুখোমুখি করেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সাবরিনা অস্বীকার করলেও জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে তার বেতন নেওয়ার তিনটি স্লিপ পুলিশের হাতে এসেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গ করায় ইতোমধ্যে সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
উপ কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, তদন্তকালে জেকেজির কম্পিউটার থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ১৯৮৫টি ভুয়া রিপোর্ট তারা পেয়েছেন।
“এই জালিয়াতির মাস্টার মাইন্ড আরিফুল। এক্ষেত্রে অন্যরা বিভিন্নভাবে তাকে সহযোগিতা করত। হিরু ছিল গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তার হাত দিয়ে তৈরি হত ভুয়া সনদ।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে জেকেজির চুক্তিতে ‘গাফলতি’ ছিল জানিয়ে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এ বিষয়টিও তারা অভিযোগপত্রে রাখবেন।